কর্মপ্রচেষ্টার পরিধি যেমন ক্রমশ বাড়ছে, তেমনি এর প্রকৃতিও প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এরূপ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের গুরুত্ব বা প্রয়ােজনীয়তা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সামষ্টিক অর্থনীতি গুরুত্ব প্রয়ােজনীয়তা/ তাৎপর্য নিম্নে
সামষ্টিক অর্থনীতি পাঠের গুরুত্ব সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে :
১. অর্থনৈতিক সমস্যা বিশ্লেষণ : সামগ্রিক অর্থনৈতিক
ব্যবস্থার সমস্যা ও এর সমাধানে সামষ্টিক অর্থনীতি দিক
নির্দেশনা প্রদান করে বিধায় এর গুরুত্ব অপরিসীম
২. জাতীয় বিশ্লেষণ : সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আওতায়
মােট জাতীয় উৎপাদনের গঠন থেকে অর্থনীতির অবস্থান সম্পর্কে যেমন জানা যায়, তেমনি বিভিন্ন বছরের তুলনার ভিত্তিতে অর্থনীতির এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দেয় বলে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
৩. অর্থবাজার বিশ্লেষণ : অর্থের চাহিদা, অর্থের যােগান,
এদের নির্ধারক, অর্থের চাহিদা-যােগানের মাধ্যমে ভারসাম্য
অবস্থা, সুদের হার ও অর্থের ভারসাম্য. পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে সামষ্টিক অর্থনীতি পাঠে জানা যায়।
৪. সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলক : সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার
সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকসমূহের প্রকৃতি ও এদের মধ্যকার পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সম্পর্কে সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যাপক ধারণা দেয়।
৫. আর্থিক ও রাজস্ব নীতি : সামষ্টিক অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সরকারের গৃহীত আর্থিক ও রাজস্ব নীতি গুরুত্বপূর্ণ দু'টো হাতিয়ার।সামষ্টিক অর্থনীতি এ দুটি নীতি সম্পর্কে ব্যাপক আলােচনা করে বিধায় নীতি-নির্ধারকদের কাছে এটি গুরুত্বের দাবিদার।
৬. বাজারের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ : সামষ্টিক অর্থনীতি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে বিভিন্ন বাজার ব্যবস্থা বিশেষ করে দ্রব্যবাজার, শ্রমবাজার, অর্থবাজার ইত্যাদির প্রকৃতি ও আন্তঃসম্পর্কের বিষয়টি বিশ্লেষণ করে বলে এর গুরুত্ব উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৭. দ্রব্যবাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ : অর্থনীতির সামগ্রিক
চাহিদা ও সামগ্রিক যােগানের নির্ধারক ও প্রকৃতি সম্পর্কে
সামষ্টিক অর্থনীতি আলােচনা করে। এ দুয়ের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট দ্রব্যবাজারে ভারসাম্য সম্পর্কে ধারণা দেয়।
৮. বস্তুগত কল্যাণ বিশ্লেষণ : অর্থনীতিবিদরা প্রতিনিয়ত
অর্থনীতির বস্তুগত কল্যাণের প্রকৃতি ও আকার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকেন। সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে কল্যাণের এ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
৯. সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা : সরকারি আয়ের উৎস,
ব্যয়ের খাত, সরকারি ঋণ, কর ব্যবস্থা, মুদ্রানীতি, বাজেট পদ্ধতি ইত্যাদি আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সামষ্টিক অর্থনীতি বিস্তারিত আলােচনা করে।
১০. শ্রমবাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ : শ্রমের চাহিদা ও
যােগানের মাধ্যমে শ্রমবাজারের নির্ধারিত ভারসাম্য অবস্থা, মজুরি হার, নিয়ােগের পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ হতে জানা যায়।
১১. মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রাসংকোচন : সামষ্টিক অর্থনীতি দেশে
সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রাসংকোচনের প্রকৃতি, কারণ, ফলাফল,
দূরীকরণের উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে আলােচনা করে বলে
সামষ্টিক অর্থনীতিবিদদের কাছে এ বিষয় অতীব প্রয়ােজনীয়
১২. ভারসাম্যের প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা : সামষ্টিক অর্থনীতি
ভারসাম্য প্রবৃদ্ধির হার, এই হার হতে বিচ্যুতি ও এর কারণ,
অভারসাম্য অবস্থা হতে ভারসাম্য অর্জনের কৌশল ও প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করে বলে এর গুরুত্ব ব্যাপক।
১৩. উন্নয়ন ও পরিকল্পনা : অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন
কৌশল এবং তা বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা প্রণয়নে
সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যাপক আলােচনা করে। তাই পরিকল্পনাবিদদের কাছে এ বিষয়টি যথায়থ গুরুত্বের দাবিদার।
১৪. মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিশ্লেষণ : সামষ্টিক অর্থনীতি
পাঠের মাধ্যমে দেশের মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
উপসংহার : উপরিউক্ত বিভিন্ন কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির
গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যার
বিশ্লেষণ এবং সমাধানের ক্ষেত্রে সামষ্টিক অর্থনীতির জ্ঞান
অপরিহার্য। তাই অর্থনীতিবিদগণ অর্থনীতির এ শাখার প্রতি
বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করেন।
Post a Comment